নিজস্ব প্রতিবেদক: মোঃ মুনজুরুল ইসলাম
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এ নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য শিক্ষা অফিসও দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন। উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘটেছে এ ঘটনা। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০০২ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে (সেকেন্ডারি) এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার্থী থাকলেও এবার এমন ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় চলতি বছর ১২ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী বলেন, ‘এবার আমাদের বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ১২ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিল। তবে বাস্তবতা হলো উল্টোটি কোন শিক্ষার্থী স্কুলে উপস্থিত হন না কিন্তু তাদের নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। কিছু ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়ে যায়। কিছু শিক্ষার্থী অন্য স্কুলে ভর্তি হয়। তবে শিক্ষকদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণেই স্কুল থেকে শিক্ষার্থী অন্য স্কুলে চলে যায়। শস্যের মধ্যে ভূত থাকলে আর কি করা যায়? শিক্ষা অফিস দীর্ঘ দুই বছর যাবত কেন কোন খোজ খবর রাখেনি বিদ্যালয়ের? এমনটি প্রশ্ন করেছেন এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজ। স্থানীয়রা জানান, ২৩ বছরেও বিদ্যালয়টির অবকাঠামো ও শিক্ষার পরিবেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিদ্যালয়টি বর্তমানে কার্যত একটি জরাজীর্ণ ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। ভাঙাচোরা বেঞ্চ, মানসম্পন্ন শ্রেণিকক্ষের অভাব এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের সংকটে পড়াশোনার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের খাতা-কলমে ২০০ শিক্ষার্থী দাবি করলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০ জনের নিচে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের জন্য রয়েছেন ১০ জন শিক্ষক, যার মধ্যে অনেকেই নিয়মিত উপস্থিত নন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলে, বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে, পাঠদান প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বেঞ্চ ভাঙা, জানালা-দরজা নেই বললেই চলে। মেঝে মাটির। শিক্ষকেরা নিয়মিত আসেন না। নাম প্রকাশে অনিশ্চুক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন প্রধান শিক্ষক সকাল ১০ টায় আসেন এবং ১১ টায় চলে যান। অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েও চলেন। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ের প্রতি প্রশাসনের তেমন কোন নজরদারি নেই। শিক্ষকদের অনিয়মিত উপস্থিতি ও পাঠদানে দুর্বলতা প্রকাশের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ হারিয়েছে। প্রধান শিক্ষকের ভয়ে নাম বলতে না চাইলেও স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাই ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু স্কুলের অবস্থা এমন যে ওরা আর যেতে চায় না। আমি আমার মেয়েকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছিলাম, পরে অন্য স্কুলে নিয়ে গেছি। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর জয়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে। এবারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বিষয়ে কেন্দ্রসচিব ও বাগোয়ান কেসিভিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টম বলেন, ‘এবার ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী আমার কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে না। এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার কামাল হোসেন বলেন, ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না থাকায় আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি, তদন্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ডাকা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
১ ম পর্ব
ধারাবাহিক পর্ব দেখতে চোখ রাখুন দৈনিক প্রতিজ্ঞা পত্রিকার পাতায়।
ফজর | ৫.২১ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১.৩০ মিনিট দুপুর |
আছর | ৩.৪৭ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ৫.২৬ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ৬.৪৪ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১২.৩০ মিনিট দুপুর |