কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ায় তামাক চাষের ব্যাপকতা বেড়েই চলেছে। তামাক চাষে কমছে জমির উর্বরতা শক্তি। তামাকের বিষক্রিয়ার কারণে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি কৃষক পরিবারের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় রাস্তার দুই পাশ দিয়ে পুরো মাঠ জুড়ে শুধু তামাক আর তামাক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কৃষি বিভাগের উদাসীনতা, তামাক উৎপাদনের আগে কোম্পানিগুলোর দর নির্ধারণ, বিক্রির নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদমুক্ত ঋণ, কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ দেওয়া তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। কয়েক বছর আগেও যেসব আবাদি জমিতে ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা,ছোলা, মোটর, খেসারি, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, সিম, টমেটো, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি ও আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হতো, সেসব জমিতে এখন তামাক চাষ হচ্ছে। তামাকজাত কোম্পানির প্রলোভন ও অধিক মুনাফার আশায় কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। অধিক টাকা খরচ করে ধানসহ অন্য ফসল চাষে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবং শ্রমিকের অধিক মজুরি হওয়ার কারণে কৃষকরা প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে লাভের আশায়, স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও, তারা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। বোরো আবাদের জমিগুলো দখল করে নিচ্ছে তামাক। বিড়ি সিগারেট উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো একদিকে সার, বীজ, কীটনাশক ও টাকার প্রলোভনে কৃষকদের দিয়ে করানো হচ্ছে তামাক চাষ। অন্যদিকে নিজস্ব পুঁজি ছাড়াই মাত্র তিন মাসে ফসল পাওয়ায় কৃষকরাও ঝুঁকে পড়েছেন তামাক চাষে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলায় মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার অঞ্চলগুলোতে ব্যাপকভাবে তামাক চাষ হয়। তবে গত দুই বছরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় কোন ধরনের তামাক চাষের রেকর্ড কৃষি অফিসে পাওয়া যায়নি। কিন্তু কুষ্টিয়া শহরের পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিনে গেলে এর ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। কুষ্টিয়া শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধানী জমিতে ও ভাগাড়ের চারপাশের মাঠ জুড়ে শুধু তামাকা আর তামাক। এই নতুন জমিতে তামাক রাজত্বের পিছনে রয়েছে এক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দালাল চক্র। যারা অর্থের বিনিময়ে কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে বেশি অর্থ প্রদান করে এসব জমিতে তামাক চাষের জন্য নেয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় একদিকে আমন ধান কেটে মাঠে রেখেছে অন্যদিকে ধানের মাঝেই তামাকের চারা রোপন করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বললে, তাদের কাছে নতুন নতুন জায়গা নেওয়ার ক্ষেত্রে উঠে আসে এক ভয়াবহ তথ্য। এখানে অনেকেই তামাক চাষ করতে রাজি নয় তারপরও তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কিছু দালাল ফিট করে রেখেছে তামাক সংশ্লিষ্টরা। তারা বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়া তামাক চাষ করাচ্ছে। যেখানে প্রতি বছরে একজন কৃষককে এক বিঘা জমি নিতে জমির মালিককে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দেওয়া লাগে সেখানে তামাক চাষের জন্য জমির মালিকের কাছ থেকে মাত্র তিন মাসের জন্যেই ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দিচ্ছে এই দালাল চক্র। কিছু কৃষক তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়ায় তারা তামাক চাষের জন্য জমি দেয় না। এর জন্য দিতে হচ্ছে তাদের কঠিন খেসারত। তামাকের সিন্ডিকেট প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ কৃষকদের নীরবে মেনে নিতে হচ্ছে সকল অন্যায়। এই সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা জানার পরও সাধারন কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ সম্পর্কে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রূপালী খাতুন এর সাথে কথা বললে তিনি তামাক দালালদের সম্পর্কে অবহিত নয় বলে জানান এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটে থাকলে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মোঃ রফিকুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তামাক চাষ বন্ধে আইনে কোন নিষেধাজ্ঞা নাই। তাই আমরা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে পারি না। সরকার যদি তামাক চাষ বন্ধ ঘোষণা করে তবে আমরা এগুলোর চাষ বন্ধ করতে পারি। এভাবে নতুন নতুন জমি তামাকের মাঠ দখল করছে যার ফলে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা আপনার পূরণ না হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে আপনি নতুন জামিতে অন্তত তামাক চাষ বন্ধের কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো দেখে আমরা ব্যবস্থা নিব।