মোঃ মুনজুরুল ইসলাম 

নৃত্য, রবীন্দ্র সংগীত, আলোচনা সভা, মঞ্চনাটক ও গ্রামীণ মেলার মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে শনিবার (১০ মে) শেষ হচ্ছে জাতীয়ভাবে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উৎসব। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য এ আয়োজন করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। শুক্রবার (৯ মে) ছিল উৎসবের দ্বিতীয় দিন। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় এই আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার। জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, এবং কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর। রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশিদুজ্জামান। এই উৎসবের উদ্বোধন হয় বৃহস্পতিবার (৮ মে)। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যানার, ফেস্টুন ও আলপনায় বর্ণিল সাজে সেজেছে কুঠিবাড়ি এলাকা। উন্মুক্ত মঞ্চে চলছিল মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আমবাগানে বসেছে গ্রামীণ মেলা, যেখানে স্থানীয় পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা।কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র মারুফ হোসেন বলেন, “কবির জন্মজয়ন্তী ঘিরে কুঠিবাড়িতে সাজ সাজ রব। দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মানুষের অংশগ্রহণ অনেক বেশি।”কুমারখালী সরকারি কলেজের ছাত্র অমিত ঘোষ জানান, “কবি এখানেই বসে ‘দুই বিঘা জমি’, ‘সোনার তরী’সহ অসংখ্য সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন। এখানে এলেই হৃদয়ে কবিগুরুর স্মৃতি স্পর্শ করে।”নৃত্যশিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “আগেও এখানে এসেছি। কবিগুরুর ‘আকাশ ভরা তারা’ গানের সঙ্গে নৃত্য করেছি। অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ।”কুমারখালী শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক কে এম আলম টমে বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনের পাশাপাশি তার মৃত্যুদিবসটিও জাতীয়ভাবে পালিত হওয়া উচিত। এছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্য থিয়েটার ও গবেষণাগার নির্মাণ প্রয়োজন।”রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান মো. আল আমিন জানান, জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কবিতা আবৃত্তি, রবীন্দ্রসংগীত, নাটক ও মেলার মাধ্যমে  শনিবার মধ্যরাতে উৎসবের পর্দা নামবে। এই আয়োজন নির্বিঘ্ন রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, “সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জন্মজয়ন্তী উদযাপনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।” সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী  বলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী জাতীয়ভাবে পালন করায় আমরা কুষ্টিয়া জেলাবাসী আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরেও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী জাতীয়ভাবে উদযাপিত হচ্ছে। ইহা বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবময় অধ্যায় বিশেষ করে কুষ্টিয়াবাসীর জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। উল্লেখ্য, বাংলা ১২৬৮ সনের ২৫ বৈশাখ, কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে শিলাইদহ এলাকায় জমিদারি পান। পিতার আদেশে ১৮৯১ সালে কবি জমিদারি পরিচালনার জন্য শিলাইদহে আসেন এবং ১৯০১ সাল পর্যন্ত এখানেই অবস্থান করেন।