| বঙ্গাব্দ
ad728
ad728

কুষ্টিয়া অগ্রণী ব্যাংকে প্রায় ১৩ কোটি টাকার এলসি জালিয়াতি

রিপোর্টারের নামঃ MD MUNZURUL ISLAM
  • আপডেট টাইম : 18-06-2025 ইং
  • 25910 বার পঠিত
কুষ্টিয়া অগ্রণী ব্যাংকে প্রায় ১৩ কোটি টাকার এলসি জালিয়াতি
ছবির ক্যাপশন: কুষ্টিয়া অগ্রণী ব্যাংকে প্রায় ১৩ কোটি টাকার এলসি জালিয়াতি

নিজস্ব প্রতিনিধি 

এলসি প্রদান করতে হলে শতভাগ মার্জিন রেখে এলসি সুবিধা প্রদান করতে হয়। কিন্তু শিল্পপতি কামরুজ্জামান নাসিরের প্রতিষ্ঠানকে কোন রকম মার্জিন না রেখে এই সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার তিন কর্মকর্তার যোগশাযসে দুই ব্যাংকের খেলাপী ঋণগ্রহিতা এক শিল্পপতিতে অবৈধভাবে প্রায় ১৩ কোটি টাকার এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকের অঞ্চল প্রধান ডিজিএম সাবিনা সুলতানা, ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক এজিএম এনামুল হক ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা তানভীরের পরস্পর যোগযাজশে নিয়ম বহির্ভুতভাবে এই এলসি জালিয়াতির ঘটনা জানাজানির পর ব্যাংকের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানা যায়। এ দিকে অগ্রণী ব্যাংক প্রধান শাখার বৈদেশিক বানিজ্যিক শাখার একটি সূত্র জানায়, ওই শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক পত্রে অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া বড় বাজার শাখার এজিএমকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে নিয়মবহির্ভুতভাবে দেয়া ৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৭০ দশমিক ৫৮ ডলার সমপরিমান ১২ কোটি টাকার বেশি ফেরত দেয়ার জন্য চিঠি প্রদান করা হয়েছে। জানা যায়, সিটি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ঢাকা দিলকুশা শাখার খেলাপী ঋণগ্রহীতা কুষ্টিয়ার কেএনবি এগ্রো ফিড লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী এস, এম কামরুজ্জামান নাসিরের অনুকূলে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি কুষ্টিয়া বড় বাজার শাখা সকল নিয়ম-কানুনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অবৈধ সুবিধা প্রদান করে এলসি জালিয়াতির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের ঘটনা ঘটেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এলসি প্রদান করতে হলে শতভাগ মার্জিন রেখে এলসি সুবিধা প্রদান করতে হয়। কিন্তু শিল্পপতি কামরুজ্জামান নাসিরের প্রতিষ্ঠানকে কোন রকম মার্জিন না রেখে এই সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এলসি সুবিধা প্রদানের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইড লাইন্স অনুযায়ী সিআইবি রিপোর্ট সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক কিন্তু এখানে একটি ক্ষেত্রেও সিআইবি রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়নি। সিআইবি রিপোর্টে অন্য কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তথ্য প্রদর্শিত হলে সেই গ্রাহককে নতুন কোনো সুবিধা প্রদান করা যাবে না। ব্যাংকের এই তিন কর্মকর্তা জালিয়াতির মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে সাড়ে ১২ কোটি টাকার এলসি অনুমোদন করেন যা অবৈধ ও আইন বহির্ভুত।অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া বড় বাজার শাখা সূত্রে জানা যায়, এ বছর জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখ থেকে শুরু হয়ে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১৯টি এলসি খোলা হয়। পর্যায়ক্রমে ১৯টি এলসির মাধ্যমে ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৪৫৭ মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশী মুদ্রায় ১২ কোটি ৫৯ লাখ ২৩ হাজার ৮৩২ টাকা পাচার করা হয়। এই টাকার বিপরীতে কোনো জামানত নেয়া হয়নি এবং এই টাকা এখন পর্যন্ত ব্যাংকে ফেরত দেয়া হয়নি। ব্যাংকের অঞ্চল প্রধান ডিজিএম সাবিনা সুলতানা, ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক এজিএম এনামুল হক ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা তানভীরের পরস্পর যোগযাজশে হওয়ায় বিষয়টি কেউ জানতো না। সূত্রটি আরো জানায়, গ্রাহকের নিকট থেকে কোনোরকম টাকা গ্রহণ ছাড়া অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে সুইফট মেসেজ ট্রান্সফার করে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে গ্রাহকের এই সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এলসির বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নিয়ে বিল পরিশোধ করতে হয় এক্ষেত্রে প্রধান কার্যালয়কে অবহিত না করেই সুইফট মেসেজ ট্রান্সফার করে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে ব্যাংকের ক্ষতি করা হয়েছে আর এ ব্যাপারে ব্যাংকের ডিজিএম সাবিনা সুলতানা ও এজিএম এনামুল হকের যোগসাজশ ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সূত্রটি আরো জানায়, গত মে মাসের ১৫ তারিখ অভিযুক্ত বড় বাজার শাখার বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা তানভীরকে বদলী করা হয় অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালটি বাজার শাখায়। তানভীরের পরিবর্তে যোগদান করা কর্মকর্তা বড় বাজার শাখায় যোগদানের পর তিনি দেখতে পান যে পরিমান টাকার এলসি খোলা হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে তা নিয়মবহির্ভুত এবং অপরাধযোগ্য। তিনি বিষয়টি এজিএম ও ডিজিএমকে জানালে তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে। কিন্তু এর কোনো সুরাহা না হওয়ায় বিষয়টি অগ্রণী ব্যাংক খুলনা বিভাগীয় জিএমকে জানানো হয়। পরে এ বিষয়ে একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা যায়। অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া বড়বাজার শাখায় কর্মরতদের সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার তানভীরের বিরুদ্ধে দু’টি শাখায় ঋণ জালিয়াতি করায় তার নামে অডিট আপত্তি রয়েছে যা এখনো চলমান। তানভীরের অফিসার ক্যাশ পদবী হলেও তিনি ক্যাশ বিভাগের দায়িত্ব না দিয়ে তাকে বৈদেশিক বাণিজ্যের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ডেক্সের দায়িত্ব দেয়া হয়। সূত্রটি আরো জানায়, গ্রাহকের কাছ থেকে কোনোরকম টাকা গ্রহণ ছাড়াই অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে সুইফট মেসেজ ট্রান্সফার করে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে গ্রাহকের এই সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এলসির বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নিয়ে বিল পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে প্রধান কার্যালয়কে অবহিত না করেই সুইফট মেসেজ ট্রান্সফার করে বৈদেশিক মুদ্রা প্রচার করে ব্যাংকের ক্ষতি করেছে অভিযুক্তরা। এ দিকে অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার ডিজিএম সাবিনা সুলতানা অগ্রণী ব্যাংক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় দায়িত্ব পালনকালে কেএনবির মালিক কামরুজ্জামান নাসিরের নামে একটি একাউন্ট খুলে সেখানে নিয়ম বহির্ভুত ঋণ দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ব্যাংকের শাখায় গেলে শাখা ব্যবস্থাপক এজিএম এনামুল হক জানান, কেএনবিকে নিয়ম বহির্ভুতভাবে এলসি সুবিধা দেয়া হয়েছে। যখন এলসি করা হয় তখন তিনি কোনো ব্যাংকের খেলাপী ছিলেন না। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, কেএনবি এগ্রোফিডের নামে মালিক কামরুজ্জামান নাসির ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক দিলকুশা শাখা থেকে ২৩০ কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ করেন। যার সুদে আসলে বর্তমানে ২৩৫ কোটি টাকার বেশি বলে জানা যায়। এ ঘটনায় অর্থঋণ আদালতে কয়েকটি মামলার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানা যায়। সিটি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার একটি সূত্র জানায়, কেএনবি ফিড ও কেএনবি ফ্লাওয়ার মিলস নামের প্রতিষ্ঠানের নামে এই শাখা থেকে নেয়া ঋণ খেলাপী হয়েছে প্রতিষ্ঠানের মালিক কামরুজ্জামান নাসির। অগ্রণী ব্যাংক কুষ্টিয়া ডিজিএম সাবিনা সুলতানা জানান, বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন। তাদের অনুমতি ছাড়া আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না। আপনাকে কিছু জানতে হলে ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। অগ্রণী ব্যাংক খুলনা বিভাগীয় জেনারেল ম্যানেজার সামছুল আলম জানান, বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছেন। দু-একদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কেএনবি এগ্রো ফিড লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী কামরুজ্জামান নাসিরের সাথে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।






ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ad728
ad728
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ আলোর পথ | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় অনুপম