কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
সরবরাহ বাড়ায় বাজারে আরও কমেছে নতুন ও পুরান আলুর দাম। এদিকে, আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে চলে আসায় স্বস্তি পেঁয়াজের দামেও। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) কুষ্টিয়ার মিউনিসিপাল বাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বয়লারের মুরগির মাংসের দাম কেজি প্রতি খুচরা মূল্য ২০০ টাকা, সোনালি মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, দেশি মুরগির দাম প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, দেশি হাঁসের দাম প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা , রাজহাঁসের দাম প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা। বাসমতি চাউল প্রতি কেজি খুচরা মূল্য ৯৩ টাকা, মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৭৬ টাকা, কাজল লতা চাউল প্রতি কেজি ৭০ টাকা, আঠাশ চাউল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মোটা চাউল প্রতি কেজি ৫৮ টাকা। শীত মৌসুম হওয়া সত্বেও সকল ধরনের মাছের দাম চড়া। গত কমাস ধরে দেশে পেঁয়াজের বাজার বেশ গরম ছিল। দেশের বাজারে পণ্যটির দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত ৫ সেপ্টেম্বর আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতেও বাজার নিয়ন্ত্রণে না এলে গত ৬ নভেম্বর পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক-কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। এ সুবিধা ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে। এতে আমদানি বাড়ায় ও নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করায় স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে উত্তাপ ছড়ানো পেঁয়াজের বাজারে। বিক্রেতারা বলছেন আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে পণ্যটির। পাশাপাশি বাজারে পুরোদমে উঠতে শুরু করেছে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজও। বর্তমানে কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমে খুচরায় প্রতি কেজি পুরান দেশি পেঁয়াজ ৬০-৭০ টাকা, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৪০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়। আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৩৮ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪৫- ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম কমার তথ্য মিলেছে টিসিবির পরিসংখ্যানেও। তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৩৪.৬৯ শতাংশ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২৭.০৩ শতাংশ কমেছে। আড়তদার ও আমদানিকারকরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির বিকল্প নেই। আমদানি বাড়ায় দাম কমছে। কুষ্টিয়ার মিউনিসিপাল বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাবলু বলেন, বর্তমানে আড়তে প্রতি কেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ ৪০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। মূলত ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বেড়েছে। এর প্রভাবই পড়ছে বাজারে।আরেক পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হাসেম জানান, বাজারে পুরোদমে উঠে গেছে নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ। আগামী ৩ মাস বাজারে এটি থাকবে। সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম ৪০-৬০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করতে পারে।এদিকে, স্বস্তি ফিরছে ভোক্তার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলা আলুর বাজারেও। তবে চলতি ডিসেম্বরের শুরুতেই অস্থির ছিল এ বাজার। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন খোদ বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেছিলেন, সামনে আর যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে কাজ চলছে। তবে বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ ও আমদানি বৃদ্ধি এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থার বাজার অভিযানে পাল্টাতে শুরু করেছে পরিস্থিতি। এতে কমতে শুরু করে আলুর দাম। বিক্রেতারা বলছেন, নতুন আলুর দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ৪০ টাকায় নেমেছে। এ ধরনের আলুর আধিক্যের কারণে পুরান আলুর দামও কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। আর পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি নতুন আলু ৩৮-৪০ টাকা ও পুরান আলু ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম কমার তথ্য মিলেছে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পরিসংখ্যানেও। তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম ২১.৮৮ শতাংশ কমেছে। এর আগে, সরবরাহ বাড়াতে ও দাম নিয়ন্ত্রণে গত ৫ সেপ্টেম্বর আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তাও সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আলু ও পেঁয়াজের দাম কমায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তারা বলেন, আমদানি বাড়ালে ও নিয়মিত বাজার মনিটরিং করলে দাম কমবে। এতে স্বস্তি পাবে সাধারণ ভোক্তা। এর আগে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি চালকল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিনিকেট (সরু) চালের দাম ৬২ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক। দফায় দফায় দাম বাড়তে বাড়তে এখন মিলগেটে মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকা কেজি। সে হিসেবে গত ১০ মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজি মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা।