কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ায়, বুধবার ১ জানুয়ারী ২০২৫, বোরো ধানের বীজতলা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমারখালী উপজেলার কৃষকরা। পৌষ মাসে কুয়াশায় বীজতলা নষ্টের ঝুঁকি এড়াতে নানা উপায় অবলম্বন করছেন তারা। ধানের চারার সুরক্ষায় পলিথিন ও ছাউনী দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিয়েছেন অনেক কৃষক। জেলার সব উপজেলার ধানী জমিতে একই চিত্র দেখা গেছে। আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ হতেই বোরো চাষাবাদের প্রস্তুতি হিসেবে বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে কুমারখালি পৌর এলাকাসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ১২ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ৫৩৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। সরেজমিনে কুমারখালি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ করেই এলাকার কৃষকরা কাজ শুরু করেছেন ইরি-বোরো চাষের। কৃষকরা ইরি-বোরো চাষের প্রথম পর্যায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বীজতলা তৈরি নিয়ে। তবে ইরি-বোরো চাষের জমিতে কেউ কেউ সরিষা চাষ করছেন। বীজতলা তৈরি শেষ হওয়ার পরপরই সরিষা উঠে আসবে। তখন একই জমিতে ইরি-বোরো বীজ রোপণ করবেন চাষিরা। ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহকে উপেক্ষা করে দল বেঁধে বীজতলা পরিচর্যাসহ বোরো ক্ষেত তৈরিতে কাজ করছেন কৃষি শ্রমিকরা। কুমারখালির নন্দলালপুর ইউনিয়নের বোরো চাষি এনামুল হক বলেন, শীত নামার আগেই বীজ বপন করলে বীজতলায় বেশি চারা গজায়। একইসঙ্গে রোগ-বালাই মুক্তভাবে চারা বেড়ে ওঠে। এতে বীজতলার ক্ষতি কম হওয়াসহ অল্প বীজে অধিক জমিতে চারা রোপণ করা যায়। এ কারণে আগেভাগেই বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। সদকী ইউনিয়নের আব্দুল মতিন বলেন, এলাকার অনেক কৃষক আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ করেই ইরি-বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজতলার চারা গাছ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে সবুজে ভরে উঠেছে বীজতলা। কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ রাইসুল ইসলাম বলেন চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলার প্রতিটি এলাকায় বীজতলা তৈরি এবং বোরো আবাদের জমি তৈরির কাজ চলছে। বীজতলায় চারাগাছ যাতে ভালো হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শসহ সহযোগিতা করা হচ্ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষভাবে এ বিষয়ে কাজ করছেন।কৃষকরা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকার কাজে ব্যস্ত। কেউ কেউ বীজতলার বাড়তি পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি করেছেন ছোট ছোট ড্রেন। এছাড়া চারার ডগায় জমে থাকা শিশির ঝরিয়ে দিতে ব্যবহার করছেন পাটকাঠি। আকস্মিক বৃষ্টির পূর্বাভাস ও ঘন কুয়াশায় গত এক সপ্তাহ যাবত জেলা জুড়ে বোরো ধানের বীজতলার বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন কৃষকরা। কৃষকেরা বলছেন, কুয়াশা তীব্র হলে বীজতলার অঙ্কুরিত চারার বৃদ্ধি কমে যায়। এছাড়া কুয়াশার কারণে ধানের চারা বিবর্ণ হয়ে যায়। এতে ভালো চারা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। উপজেলার কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশা পড়ছে। এতে ধানের চারা পুড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। চারা যাতে নষ্ট না হয়ে যায় এজন্য পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখা ছাড়া উপায় নেই। ঘন কুয়াশায় বোরো ধানের চারা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তার ওপর আবার অসময়ে বৃষ্টির ঝুঁকিও আছে। বীজতলার চারপাশে ছোট ছোট ড্রেন করেছি। যেন বীজতলার বাড়তি পানি সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে। জেলার সব উপজেলায় বোরো ধান চাষীরা একই রকম প্রস্তুতি ও পরিচর্যা নিয়েছেন। যদি ধানের চারার ডগা লালচে বর্ণ ধারণ করে তাহলে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। শৈত্যপ্রবাহ থাকলে ধানের চারার ডগায় শিশির জমে। এটা ক্ষতিকর। তাই, পাটকাঠি বা লম্বা কাঠি দিয়ে ধানের চারার ডগা থেকে শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। এখন কৃষকদের অনেকে জমিতে নেমে পড়েছেন বোরো চাষে। হাল দিয়ে জমি প্রস্তুত করে বীজ ফেলে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। কিছুদিন পর সেই চারা রোপণ করা হবে জমিতে। তাই কেউ জমির নাড়া কাটতে, কেউ জমি চাষে আবার কেউ ধানের বীজ ফেলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীতের সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজে করে যাচ্ছেন তাঁরা।