কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: মোঃ মুনজুরুল ইসলাম
কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নে ১১ বিঘা জায়গার উপর তৈরি করেছেন বিশাল পিয়ারা বাগান। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে স্বরজমিনে গিয়ে দেখা যায় পেয়ারার বাগানে কর্মচারীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন পেয়ারা সংগ্রহের কাজে। পেয়ারার বাগান মালিক অধ্যাপক রহমত উল্লাহ সলিমপুর ডিগ্রি কলেজ ঈশ্বরদী,পাবনার একজন শিক্ষক। তিনি কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৫ বছর যাবৎ কৃষি কাজের সাথে নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত। ইহা তার পেষা নয় , নেশায় পরিনত হয়েছে। সার্বক্ষণিক কৃষি নিয়ে তার গবেষণা। তিনি চাষ করেন পেয়ারা, বরই, লেবু, লিচু, পেঁপে এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সবজি। তিনি জানান পেয়ারা পরিপূর্ণ হইতে ৫ মাস সময় লাগে। পেয়ারা বাগানের পাশেই রয়েছে মনো মুগ্ধকর ২ বিঘা জায়গার উপর বরই বাগান। বরই পরিপূর্ণ হতেও ৪-৫ মাস সময় লাগে। এছাড়াও তিনি চাষ করছেন ২ বিঘা জমিতে লেবুর বাগান। বাগানে লেবু পরিপূর্ণ হইতে ২ মাস সময় লাগে। তার রয়েছে আরো একটি বড় প্রজেক্ট যার জন্য তিনি সকলের কাছে পরিচিত। সেটি হলো ৬০ বিঘা ভূমির উপর লিচুর বাগান, যা রাজশাহী জেলায় অবস্থিত। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি যখনই সময় পান ছুটে যান তার কৃষি জমিতে। যেহেতু বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ তাই কৃষির উপর তিনি সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখেন। যেকেও তার কৃষি বাগানে গেলে মনমুগ্ধকর বাগান দেখে আত্মতৃপ্তি পাবেই। তিনি জানান কৃষি বাগান করতে আমার ভালো লাগে এখানে আমি আনন্দ পাই তায় যখনই সময় পাই ছুটে আসি আমার এই কৃষি বাগানে। এই কৃষি বাগানের মাধ্যমে অনেক বেকার লোককে আমি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। বাগানে কাজ করে তাদের পারিবারিক আয় রোজগারের মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দে পরিবার চালাতে সক্ষম হয়। পরিশ্রমে ধন আনে পূর্ণ আসে সুখ। এই প্রবাদ বাক্য প্রতিটি সফলতাকে ইঙ্গিত করে। তাই যখনই কোনো সুখবর আমাদের সামনে হাজির হয় আমরা চনমনে হয়ে উঠি। আর সে গল্পটি যদি হয় কৃষকের তাহলে আমাদের গর্বের সীমা থাকে না। কারণ কৃষিবান্ধব এই দেশের মাটিতে যেখানেই একটি বীজ রোপণ করা হয় সেখানেই ফলে সোনা। একজন রহমত উল্লাহ এখন ৭৫ বিঘা বাগানের মালিক। তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে এই পেয়ারা ও লিচু চাষে। রহমত উল্লাহার সফলতায় এলাকায় গড়ে উঠেছে আরও অনন্ত ২০/২৫টি পেয়ারা বাগান। এই বাগানে থাই-৩, থাই-৫, গোল্ডেন-৮ ও সুপার-১০ জাতের পেয়ারা চাষ হচ্ছে। বাগানে উৎপাদিত পেয়ারায় দেশী ফলের ব্যাপক চাহিদা মিটছে। এছাড়া পেয়ারা বাগানে নিয়োজিত শ্রমিকদের দৈনন্দিন আয়ের উপর নির্ভরশীল অনন্ত ৩০/৪০টি পরিবার। পাইকার ফল ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বাগান থেকে সরাসরি পেয়ারা সংগ্রহের পর জেলা ব্যাপী সরবরাহ করেন। কৃষি বিভাগের সার্বিক পরামর্শ ও সহায়তায় পেয়ারা বাগান মালিক রহমত উল্লাহ সফল ও স্বাবলম্বী। তার সাফল্যে উপজেলার অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে পেয়ারা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। বাগান মালিক রহমত উল্লাহ জানান, ২০১০ সালে তিনি পেয়ারা চাষ শুরু করেন।এরপর ধারাবাহিক সাফল্যে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পেয়ারা চাষে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি তার সামাজিক মর্যাদাও বেড়েছে বলে তিনি জানান। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মোঃ রফিকুজ্জামান জানান, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জেলায় পেয়ারা চাষ বাড়ছে। বাগান মালিকদের সার্বিক সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে দেশের জনগোষ্ঠীর ভিটামিন, পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পেয়ারা চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, পেয়ারা বাগানে পোকামাকড় দমনে কোনো কীটনাশকের ব্যবহার করা হয় না। কেব্ল কৃষি বিভাগের পরামর্শে গাছে ভিটামিন জাতীয় কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া পোকামাকড় ঠেকাতে পেয়ারা একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পলিথিন ব্যাগে মাড়িয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়।রহমত উল্লাহ বলেন, পেয়ারা বিক্রি করতে কোনো বেগ পেতে হয় না। বাগানে এসেই তুলে নিয়ে যায় পেয়ারার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আমারা শুধু ওজন ঠিক আছে কিনা তা দেখি। বাগানে পেয়ারা কিনতে আসা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বাগান থেকে দুই হাজার তিনশত থেকে ২৬০০ টাকা মণ পর্যন্ত পাইকারি পেয়ারা কিনে বিক্রি করছি। খুচরা বিক্রি করলে কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। এছাড়াও বাজারে এখন অন্যান্য ফল কম। তাই পেয়ারার চাহিদা রয়েছে বেশ ভালো।
ফজর | ৫.২১ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১.৩০ মিনিট দুপুর |
আছর | ৩.৪৭ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ৫.২৬ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ৬.৪৪ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১২.৩০ মিনিট দুপুর |