| বঙ্গাব্দ
ad728
ad728

কুষ্টিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

রিপোর্টারের নামঃ MD MUNZURUL ISLAM
  • আপডেট টাইম : 21-02-2025 ইং
  • 23392 বার পঠিত
কুষ্টিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন
ছবির ক্যাপশন: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: মোঃ মুনজুরুল ইসলাম 
কুষ্টিয়ায় যথাযগ্যে মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে কুষ্টিয়া কালেক্টর চত্তরের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান। এরপর জেলা পরিষদ, জেলা সিভিল সার্জন অফিসসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী দপ্তর ও পেশাজীবি সংগঠন ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
১৯৫১ সালের শেষ দিকে ভাষা আন্দোলন সম্বন্ধে পরিপূর্ণ আলোচনার সৃষ্টি হতে শুরু করে কুষ্টিয়াতে। এসময় কুষ্টিয়ার স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা, পেশাজীবী মহল এবং ছাত্র নেতাদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আলোচিত হতে থাকে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও আন্দোলন গড়ে তোলার সচেতনতা। এসময় রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তমদ্দুন মজলিসের সুদৃঢ় যোগাযোগ হয়। তাদের মধ্যে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল হক, সৈয়দ আলতাফ আলী, ডা. আবুল কাশেম এবং স্থানীয় স্কুল শিক্ষার্থী শাহিদা খাতুন।
কুষ্টিয়ায় ভাষা আন্দোলন পূর্ণাঙ্গভাবে দানা বাঁধতে থাকে ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দিলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র সমাজ। বিক্ষোভে শামিল হয় কুষ্টিয়ার বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের মূল দিনে সমগ্র কুষ্টিয়া জুড়ে স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট পালিত হয়। এদিন কুষ্টিয়ার সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। একই সঙ্গে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দখলে। দুপুর ১২টায় বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিলে কুষ্টিয়া শহর প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে তারা আরবি হরফে বাংলা লেখার পরিকল্পনা প্রত্যাহারেরও দাবী জানায়। এদিন দুপুর ২টায় মাওলানা আবদুল হকের সভাপতিত্বে মিউনিসিপ্যাল স্কুল হলে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভায় দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ যোগদান করেছিলেন।
২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে কুষ্টিয়ার সমস্ত রাস্তা ঘাট, অলি-গলির দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল। এসময় শহরে অলিগলির দেয়ালে লাল রক্ত বর্ণে লেখা ছিল 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই'।
২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি বিশেষ দিন। ১৯৫২ সালের এ দিনে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ নাম না জানা অনেকে। তাদের শ্রদ্ধা জানাতে ২১ ফেব্রুয়ারি ভোরে খালি পায়ে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শুরু হয় দিনটি।
অমর একুশ ও প্রভাতফেরীর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি/ ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু, গড়ায়ে ফেব্রুয়ারি/ আমার সোনার দেশের, রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রভাতফেরীর সময় বাজতে থাকে সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর রচিত এই গানটি।
২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সহ সব বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও সুপরিচিত। বাঙালির ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের এ দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে অনেক তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত সহ অনেকেই। এজন্য এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি রফিকুল ইসলাম নামের এক কানাডা প্রবাসী বাঙালি জাতিসংঘের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারী কফি আনানকে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে রফিক ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদদের অবদানের কথা উল্লেখ করে কফি আনানকে প্রস্তাব করেন ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে যেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ ঘোষণা দেয় প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হবে। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। তবে ১৯৫২ সালের পর থেকে প্রতি বছর এ দিনটি জাতীয় শহীদ দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে।

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ad728
ad728
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ আলোর পথ | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় অনুপম