| বঙ্গাব্দ
ad728
ad728

মস্তিষ্ক যত দিন সুস্থ থাকবে, ওই রাত ততদিন স্মৃতি হয়ে থাকবে: ফুলপরী

রিপোর্টারের নামঃ MD MUNZURUL ISLAM
  • আপডেট টাইম : 14-02-2025 ইং
  • 27579 বার পঠিত
মস্তিষ্ক যত দিন সুস্থ থাকবে, ওই রাত ততদিন স্মৃতি হয়ে থাকবে: ফুলপরী
ছবির ক্যাপশন: ফুলপরী

২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলে ছাত্রলীগের হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন ফুলপরী খাতুন। ফুলপরী তখন প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি এখন ২য় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। দেখতে দেখতে তার ওপর হওয়া নির্যাতনের দুই বছর পার হয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় পার হলেও সেই দুর্বিষহ রাতের স্মৃতি এখনও তাড়া করছে ফুলপরীকে। গত বুধবার রাতে সেই রাতের স্মৃতি মনে করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘মানুষের প্রতি অগাধ ইতিবাচক ধারণার কারণে আর বেশি বোকা হওয়ায় সেদিন রাতে তাদের সাথে চলে গেলাম। সেই চলে যাওয়াটা চিরদিনের জন্য চলে যাইনি যে এটা আমার ভাগ্য। জীবনে ফেলে আসা রাতগুলোর মধ্যে ওটাই জঘন্যতম রাত। মস্তিষ্ক যতদিন সুস্থ থাকবে ওই রাত ততদিন স্মৃতি হয়ে থাকবে।’স্ট্যাটাসে ফেব্রুয়ারির সেই রাতে তার ওপর হওয়া নির্যাতনের কিছু বর্ণনাও তুলে ধরেন ফুলপরী। তিনি লিখেছেন, ২০২৩ সালের সেই সময়টায় আমি যে কতো অসহায় ছিলাম! সেই রাতে ভাবতেছিলাম কি এমন করলাম যার জন্য এত বড় তুচ্ছতাচ্ছিল্য অপমানের শিকার হলাম! ঝামেলা থেকে মুক্তির জন্য নিজেই ছোট হয়েছি, ক্ষমা চেয়েছি, শান্তি চেয়েছি। চলছে তো চলছেই রাত শেষ হয়ে যায় তাও প্রতিহিংসা বিন্দু মাত্র কমে না। মনে হচ্ছিল কোনো মার্ডার করা আসামির রিমান্ড চলছে। শ্বাসকষ্ট এর জন্য আমারই ইনহেলার চেয়েও পাইনি।  ফুলপরী আরও লিখেছেন, আমার মনটা পাথরের মতো শান্ত, শ্বাস প্রশ্বাস গুলো ছোট হয়ে আসছিল। তিন দিন হলো ঠিকঠাক মতো খাওয়াও নাই ঘুমও নাই, মনে হচ্ছিল কখন যেন অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাব। শীতে কাঁপতেছিলাম মুখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিল মুখে আঙ্গুল এর দাগ, ঘুষির দাগ মুছে যাওয়া জন্য। মনে হয়েছিল এই অত্যাচার এর ধরণ গুলো কোনো কাপুরুষের শিখিয়ে দেওয়া।এছাড়াও স্ট্যাটাসে তার ওপর হওয়া নির্যাতনের বিচার চাইতে গিয়ে যেসব বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন সে বিষয়টি তুলে ধরে ফুলপরী বলেছেন, কতো মানুষের কতো কথা নিঃশব্দে হজম করেছি। শিক্ষিত চশমায় আঁটা মানুষও আমার মুখে ওপর আঙ্গুল তুলেছে। এলাকার রাজনৈতিক নেতারা বলতো আমার জন্য পাঁচটি মেয়ের জীবন নষ্ট। এতো মায়া! কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে নিজেকে যে শাস্তিটা দিতে পারতাম তা ইচ্ছাকৃতভাবেই দেইনি। শুধুমাত্র সেই সময়টাতেই নয়, বর্তমানেও সমাজের মানুষের নানা কটু কথা শুনতে হয় বলে ভাষ্য ফুলপরীর। তবে তিনি আর এখন মানুষের এসব কথা কানে নেন না। সমাজের চারপাশের পরিবেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচতে চান তিনি। তিনি বলেন, নিজেকে সামলাতে অনেক সময় লেগেছে, যা আমি কখনোই প্রত্যাশা করিনি। এ সমাজ একটা মানুষকে সুন্দর ভাবে বাঁচতে দিতে চায় না, পেছন থেকে হাত-পা ধরে টানতে থাকে। তখনও এলাকার মানুষ কত বাজে কথা বলেছে, এখনও বলে। তবে আমি বরাবরই চুপচাপ স্বভাবের। কে কি বলল এসব কানে নেই না। মানুষ হাজার কথা শুনালেও কিছুই মনে করি না। চুপচাপ থাকি। জীবন থেকে, চারপাশের পরিবেশথেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দর করে বাঁচতে চাই। তাই তেমন কাউকে ভক্তি করি না, মানুষের থেকে দূরে দূরে থাকি সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। নিজের সৎ লক্ষ্য পূরণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। ২০২৩ সালের ১১ ও ১২ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফুলপরীকে গণরুমে ডেকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে পাল্টা অভিযোগের প্রেক্ষিতে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় ওই বছরের ১ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশনায় দোষী সাব্যস্ত ছাত্রলীগ নেত্রীসহ পাঁচ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি ছাত্রলীগ থেকেও তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাইকোর্টের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে অভিযুক্তদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু শাস্তি বিধিসম্মত না হওয়ায় গৃহীত শাস্তি বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পুনরায় শাস্তি নির্ধারণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বশেষ ওই বছরের ২১ আগস্ট জরুরী সিন্ডিকেটে দোষীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী, ছাত্রলীগ কর্মী হালিমা আক্তার, ইসরাত জাহান, তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।

ad728

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ad728
ad728
ফেসবুকে আমরা...
নামাজের সময়সূচী
জাতীয় সঙ্গীত
©সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ আলোর পথ | আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ
সকল কারিগরী সহযোগিতায় অনুপম