ট্রাভেল ব্যাগে যাতে কোনো প্লাস্টিক-পলিথিন না থাকে, সেটা ভালো করে দেখে নিয়েই সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছিলাম। বাসে ফকিরাপুল থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত পথটুকু পার হতেই পাক্কা তিন ঘণ্টা গেল। এরপর চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আরও দুই ঘণ্টা পথে আটকে থাকতে হলো। যা–ই হোক, কক্সবাজারের ডলফিন মোড়ে বাস থেকে নেমে অটোরিকশা নিয়ে নুনিয়াছড়া ঘাট। ততক্ষণে জাহাজ ছেড়ে দেওয়ার আয়োজন চলছে। প্রবেশমুখে কয়েকজন দাঁড়িয়ে যাত্রীদের টিকিট চেক করছেন। পাশে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি পর্যটকদের উদ্দেশে বলে চলেছেন, পলিথিনের ব্যাগ সঙ্গে নেওয়া যাবে না। ভাবলাম, পর্যটকেরা নিশ্চয়ই নিজ দায়িত্ববোধ থেকেই পলিথিন বা প্লাস্টিক বহন করছেন না। কিন্তু জাহাজের ডেকে বসেই উল্টো চিত্রটা দেখা গেল। প্রায় সবার হাতে প্লাস্টিকের পানির বোতল। ধন্দে পড়লাম, প্লাস্টিকের পানির বোতল কি প্লাস্টিক নয়?
কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন প্রায় ছয় ঘণ্টার জার্নি। যাঁরা খাবার নিয়ে যাননি, তাঁদের জাহাজের খাবারের ওপর নির্ভর করতে হবে। খিচুড়ি, পপকর্ন, স্যান্ডউইচ, বার্গার, কফি ও আইসক্রিম পাওয়া যায়। কিছু খাবার কাগজের ঠোঙায় দেওয়া হলেও বেশির ভাগ খাবার দেওয়া হচ্ছিল প্লাস্টিকের প্যাকেটে। কফি ওয়ানটাইম কাপে। সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার অনুমতি পাওয়া পর্যটকের সংখ্যা এ বছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে দুই হাজারের মধ্যে নামিয়ে আনা হয়েছে। দ্বীপে পলিথিন ও প্লাস্টিক নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকদের জন্য সুপেয় পানি সেখানকার বড় একটা সমস্যা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেককে তাঁদের উঠানে, বড় ট্যাংকে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখতে দেখেছি। ফলে পর্যটকদের জন্য বোতলজাত পানির বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। ধরে নিই, একজন যদি দিনে গড়ে দুই লিটার পানি পান করেন, এ হিসাবে কমপক্ষে দুটি পানির বোতল জমা হচ্ছে। পরিবেশ ও প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে অনেকে সচেতন হলেও অনেকেই থোড়াই কেয়ার করেন। সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল। সুপেয় পানির এ সমস্যা সমাধান না করা গেলে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের বিষয়টি সোনার পাথরবাটির মতোই থেকে যাবে।
খাওয়ার পানির বোতলের সঙ্গে যুক্ত হয় কোমল পানীয়র প্লাস্টিকের বোতল। দ্বীপটিকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে গেলে প্লাস্টিকের বোতলে কোমল পানীয় আসা বন্ধ করতে হবে। সৈকতের পাশে অস্থায়ী দোকানগুলোয় চিপস, চানাচুর বিক্রি হয়। চিপস, চানাচুর খেয়ে অনেকে সৈকতেই ফেলছেন পরিত্যক্ত প্যাকেট। এসব বর্জ্য দ্বীপটি থেকে বের করে আনার কিংবা রিসাইকেল করার ব্যবস্থা চোখে পড়েনি।
সেন্ট মার্টিনজুড়ে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক রিসোর্ট ও হোটেল। দিনে দুই ঘণ্টা বিরতি বাদে বাকি ২২ ঘণ্টা বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হয়। অথচ দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রায় একমাত্র উৎস হচ্ছে ডিজেলচালিত জেনারেটর। বেসরকারি মালিকানায় একটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প আছে। কিন্তু ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের খরচ পড়ে ৫০ টাকা। এত খরচ করে কজনার পক্ষে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা সম্ভব? ডিজেল পুড়িয়ে বিদ্যুৎ হচ্ছে, পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে। কম খরচে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সরবরাহ ছাড়া এ থেকে পরিত্রাণ আছে কি? পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ হাজার মানুষ বেড়াতে যেতেন। এখন সেটা কমে দুই হাজার হয়েছে। লোভনীয় পর্যটনকেন্দ্র হয়ে ওঠায় সম্পদশালীরা সেখানে হোটেল-রিসোর্ট বানাতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। স্থানীয়দের জমি কিনেই সেগুলো তৈরি হয়েছে। দ্বীপটির বেশির ভাগ জমি এখন তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। নতুন রিসোর্টও তৈরি হতে দেখেছি। অথচ সেখানে ভবন নির্মাণের জমি বেচাকেনা আইনত নিষিদ্ধ। অখচ অনেকে পাকা স্থাপনা করেছেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানও সে কাজে পিছিয়ে নেই।
ফজর | ৫.২১ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১.৩০ মিনিট দুপুর |
আছর | ৩.৪৭ মিনিট বিকাল |
মাগরিব | ৫.২৬ মিনিট সন্ধ্যা |
এশা | ৬.৪৪ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১২.৩০ মিনিট দুপুর |